দীর্ঘ ২১ বছর ধরে বন্ধ থাকার পর অবশেষে চালু হচ্ছে ঠাকুরগাঁও রেশম কারাখানা।
কারখানাটি চালু করতে কারিগরি কাজের অধিকাংশই শেষের পথে। কারখানার মেশিনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। আর কয়েকদিনের মধ্যেই প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে আসবে কারখানায়। কারখানার মেশিন দিয়ে কাপড় বোনার কাজও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
শহরের গোবিন্দনগরের ঠাকুরগাঁও রেশম কারাখানায় গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন বেশ কয়েকজন শ্রমিক এসেছেন। এসেছেন নতুন নিয়োগ পাওয়া শ্রমিক। সবার মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে প্রাণ চাঞ্চল্য। শ্রমিকেরা নতুন উদ্যোমে ২১ বছর থেকে পড়ে থাকা কারখানার মেশিনগুলো পরিষ্কার করছেন। সুতা লাগিয়ে কাপড় বোনার কাজও শুরু করেছেন।
প্রসঙ্গত, এক সময় ঠাকুরগাঁও জেলার ঐতিহ্যবাহী রেশম কারখানায় উৎপাদিত হতো মসৃণ সিল্ক কাপড়। এর মধ্যে ২০টি যন্ত্রচালিত তাঁত ও ২০টি হাতে বোনা তাঁত রয়েছে। এগুলো সচল করা হয়েছে।
রেশম কারখানা বন্ধ হওয়ার পর প্রায় পাঁচ হাজার রেশম চাষি বেকার হয়ে পড়েছিলেন। তার মধ্যেও প্রায় দুই থেকে তিন হাজার চাষি রেশম চাষ ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু তুঁতগাছের অভাবে তারা গুটিপোকা পালন করতে পারছিলেন না। এখন কারখানাটি চালু হলে রেশম চাষের সঙ্গে যুক্ত পাঁচ হাজার বা তারও বেশি চাষির আবারও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
রেশম চাষিদের গুটি পোকা পালনের মাধ্যমে তাদের সুতা দিয়ে ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানায় উৎপন্ন হবে মসৃণ সিল্ক কাপড়। এই কাপড় আবারও দেশ ও দেশের বাহিরে রপ্তানি করতে পারবেন এই আশায় পাঁচ বছরের জন্য কারখানাটি লিজ নিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের সুপ্রিয় গ্রুপ।
জানা যায়, পাট কারখানাসহ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে সুপ্রিয় গ্রুপের।
গত ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ঠাকুরগাঁও জেলার রেশম কারখানা চালুর বিষয়ে ১১ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়।
ওই বছর ১২ জুলাই কারখানাটি পরিদর্শন করেন কমিটির সদস্যরা। কারখানাটি চালু করা সম্ভব বলে কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করে। তখন থেকেই শোনা যাচ্ছিল মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে যে কোনো সময় কারখানাটি চালু হবে।
এরপর ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর কারখানায় সরেজমিনে পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের মহাপরিচালক মুহ. আব্দুল হাকিম।
ওই সময় তিনি জানিয়েছিলেন, কারখানা চালুর জন্য ৯ সদস্যের একটি টেকনিকেল কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কারখানাটি কীভাবে চালু করা যায় সেজন্য একটা পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন। সেই পদ্ধতির ভিত্তিতেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সুপ্রিয় গ্রুপকে পাঁচ বছরের জন্য কারাখানাটি লিজ দেওয়া হয়।
সুপ্রিয় গ্রুপ কারখানার মহাব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন মো. বেলায়েত হোসেনকে।
আর পড়ুন: রেশমের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তাঁতিদের সহায়তা করা হবে: পাট মন্ত্রী